Aguli News 13-01-2023: পার্টি অফিসে কার্যালয় থাকবে, কার্যক্রম থাকবে। তবে শুধু নতুন কার্যালয় হলেই চলবে না। সাধারণ মানুষের সমস্যা নিরসনে এই পার্টি কার্যালয়ের দুয়ার উন্মুক্ত রাখতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তবেই এই কার্যালয় উদ্বোধনের স্বার্থকতা আসবে। আগে কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে শুধু পার্টির লোকেরাই থাকতো। কিন্তু সেই সংস্কৃতি নিয়ে চলে না ভারতীয় জনতা পার্টি। এই পার্টি মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করার পার্টি। শুক্রবার উত্তর জেলার ধর্মনগরে ভারতীয় জনতা পার্টির নবনির্মিত জেলা কার্যালয়ের শুভ সূচনা করে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে এই বার্তা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সেই সাথে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীদের বিজয় সম্পর্কে নিশ্চিত অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
শুধু উত্তর জেলার পার্টি কার্যালয় নয়, একইদিনে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে শুভ দ্বারোদঘাটন হল ধলাই জেলা এবং গোমতী জেলার ভারতীয় জনতা পার্টির নবনির্মিত জেলা কার্যালয়। সব জায়গাতেই পার্টি অফিস উদ্বোধনের প্রাক্কালে দলীয় কার্যকর্তাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ধর্মনগরের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার বিশ্ববন্ধু সেন, বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাস, ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য প্রভারী ডঃ মহেশ শর্মা, দলের প্রদেশ সহ সভাপতি তাপস ভট্টাচার্য, উত্তর জেলার জেলা সভাধিপতি ভবতোষ দাস সহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব। সামনেই ২০২৩ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে রাজ্যের তিনটি জেলায় ভাজপার নবনির্মিত দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন নিঃসন্দেহে কার্যকর্তাদের কাছে এক্সট্রা অক্সিজেন জোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এরআগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে ঐতিহাসিক সভা, কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে জনবিশ্বাস যাত্রা রথের উদ্বোধন এবং ভারতীয় জনতা পার্টির রাষ্ট্রীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার উপস্থিতিতে জনবিশ্বাস যাত্রা রথের পরিসমাপ্তি দলের কর্মী সমর্থকদের কাছে একটা বাড়তি পাওনা।
এদিন দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, ২০১৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির ক্ষমতাসীন হওয়ার পেছনে দলের পৃষ্ঠাপ্রমুখদের একটা বিশাল ভূমিকা ছিল। অথচ এই পৃষ্ঠাপ্রমুখ সম্পর্কে কিছুই আন্দাজ করতে পারে নি কমিউনিস্ট পার্টি। রাজ্যে 42 হাজার পৃষ্ঠাপ্রমুখ রয়েছেন। দলের জন্য নিরন্তর কাজ করে গিয়েছেন তারা। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে আসার দিন ঐতিহাসিক জন সমাগম হয়েছিল। ধর্মনগর এবং সাব্রুমের জনবিশ্বাস রথ যাত্রাতেও প্রচুর পরিমাণে মানুষের সমাগম হয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে বিশ্বাসী। এই দলের অন্যতম উদ্দেশ্য পন্ডিত দীন দয়াল উপাধ্যায়ের একাত্ম মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা করা। তবে শুধু পার্টি অফিস উদ্বোধন করলে হবে না। পার্টি অফিস সবসময় সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পার্টি কার্যালয়গুলিতেও একটা সুষ্ঠ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। মানুষকে সেবা দিতে হবে। সংগঠনের কাজ মানুষকে সেবা দেওয়া। পাশাপাশি মন্ডল ও কার্যকর্তাদের মধ্যেও সুষ্ঠ প্রতিযোগিতা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। আমার চাইতে ভালো কাজ কেউ করতে পারে না – এই মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। চেয়ারে অনেকে বসতে পারেন। আবার অনেকে বসতে পারেন না। কে আসবে, কে যাবে? সরকার আজ আছে, কাল নাই বা থাকতে পারে। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি সবসময় থাকবে। সংগঠনের কোন বিকল্প নেই। সংগঠনই আসল। সমন্বয়ের সাথে কাজ করাই অন্যতম কাজ। আর ভারতীয় জনতা পার্টি মানুষের জন্য চিন্তা করে। তাই এই পার্টি ছাড়া মানুষ কি খুন সন্ত্রাসের পার্টিতে যাবে? প্রশ্ন রাখেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, আগে আমরা রাজ্যে খুন সন্ত্রাসের পার্টি দেখেছি। উশৃঙ্খলতার পার্টি দেখেছি। আর এখন তারা মিতালি করার চেষ্টা করছে। পত্রপত্রিকায় তাদের নাম দেওয়া হয়েছে বামগ্রেস। ওরা এও বলছে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। কিন্তু তাদের সময় কি গণতন্ত্র ছিল রাজ্যে? শুধু দক্ষিণ জেলাতেই ৬৯ জন রাজনৈতিক খুন হয়েছেন। এছাড়া উত্তর জেলা সহ অন্যান্য জায়গায় ৫০/৬০/৭০ খুন করেছে ওরা। সেই কালো হাতকে কি আবার ফিরিয়ে আনবেন? জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে আমরা দেখেছি তৃণমূল। ওরা রাজ্যকে মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রেখেছে। ত্রিপুরায় খুন সন্ত্রাসের পার্টি মানে কমিউনিস্ট। আর উশৃঙ্খলতার পার্টি মানেই কংগ্রেস। এই দুইয়ের যোগফল তৃণমূল। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঠিক নির্দেশনায় ত্রিপুরা উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিজেপির ট্রেন এগিয়ে যাচ্ছে। যার গন্তব্যস্থল উন্নয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত। অথচ তারা বসে বসে জোট গড়ার স্বপ্ন দেখছে। কোভিডের সময়েও রাজ্যে বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া যায় নি। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নির্দেশনায় বিজ্ঞানীরা কোভিডের ভ্যাকসিন আবিস্কার করে ঠিক সময়ে দেশবাসীকে রক্ষা করেছেন। এর পাশাপাশি রাজ্যের মানুষকে সুশাসন পাইয়ে দিতে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে মানুষকে প্রশাসনিক বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া যেকোন সমস্যা নিরসনের জন্য আমার সরকার নামে একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও মানুষ ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গেই থাকবে এবং ৫০টির অধিক আসন নিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসবে।
উত্তর জেলার পর এদিন ভারতীয় জনতা পার্টির ধলাই জেলা কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা ফলক উন্মোচন এবং ফিতা কেটে নবনির্মিত জেলা কার্যালয়ের দ্বারোদঘাটন করেন। আমবাসা জেলা পরিষদের কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় এই দ্বিতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, বিধায়ক পরিমল দেববর্মা, বিধায়ক শম্ভু লাল চাকমা, প্রদেশ বিজেপি সাধারণ সম্পাদক টিংকু রায় সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। পরে সংবাদ মাধ্যমকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই নয়া কার্যালয় সকল অংশের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই কার্যালয়কে বিজেপি দলের কার্যকর্তাগণ মন্দির হিসাবে গণ্য করেন। এই অফিস থেকে মানুষ একাত্ম মানবতাবাদের বিষয়ে জানতে পারবেন। মানুষ বিজেপি দল ও বিজেপি সরকারের সাথে রয়েছে।
এদিকে এদিনই গোমতী জেলার উদয়পুরে ভারতীয় জনতা পার্টির নবনির্মিত জেলা কার্যালয়ের শুভ দ্বারোদঘাটন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী প্ৰণজিত সিংহ রায়, নির্বাচনী প্রভারী ডঃ মহেন্দ্র সিং, প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক টিংকু রায়, সম্পাদক রতন ঘোষ, বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষ, রঞ্জিত দাস, গোমতী জেলা সভাপতি অভিষেক দেবরায়। বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বিভিন্ন ইস্যুতে কমিউনিস্ট এবং কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করেন। উল্লেখ্য, বিজেপির প্রদেশ সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময়ে রাজ্যের সাতটি জেলায় দলের নতুন জেলা কার্যালয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। যথারীতি সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলো মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই।

AGULI STAFF DESK