আগরতলা, ৩১ জানুয়ারি: শেষপর্যন্ত সিপিএম কংগ্রেসের অশুভ জোটে অশান্তি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেই অশুভ মিতালিতে জোর ধাক্কা এলো। জোট ধর্ম ভেঙে কংগ্রেসের অনেক আসনেই নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করালো বামফ্রন্ট। যার মধ্যে সুদীপ রায় বর্মনের আগরতলা কেন্দ্র, গোপাল রায়ের বনমালীপুর কেন্দ্রও বাদ দেয় নি বামেরা। জোট ধর্মকে কলাপাতায় মুড়িয়ে ৬০-এ ৬০ আসনেই প্রার্থী দাঁড় করায় বামফ্রন্ট। আর পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কংগ্রেস প্রার্থী দিল মাত্র ১৭টি আসনে। এই ঘটনা থেকেই একপ্রকার পরিষ্কার হয়ে গেলো প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের উপর আস্থা না রেখে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে একক লড়াইয়ে বিশ্বাস রাখলো মেলারমাঠের লালবাড়ি। যদিও এই ঘটনায় গণদেবতার কাছে বিশ্বাস বা আস্থা দুটোই হারালো সিপিএম কংগ্রেস। দুই দলের নেতৃত্বের উপর বিশ্বাস ও ভরসা হারালো সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে কর্মী সমর্থকরা। যার পরিণতি আসন্ন নির্বাচনে খুবই খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। অপরদিকে সিপিএম কংগ্রেসের অশুভ মিতালি দুরমুশ হয়ে যাওয়ায় আখেরে লাভ হলো বর্তমান শাসক ভারতীয় জনতা পার্টির।
মেলারমাঠ এবং পোস্ট অফিস চৌমুহনীর নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখেছিলেন জুনিয়র বর্মন। কিন্তু মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিনে আচমকা সিঁদুরে মেঘ দেখলেন ৬ আগরতলা কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক তথা কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মন। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে যে তিনি আর কেউ নন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শত্রু সিপিএমের শঙ্কর প্রসাদ দত্ত। যিনি একটা সময় সিপিএমের হয়ে বিধায়ক ও সাংসদ হিসেবে ছিলেন। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আসন্ন নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের জন্য সিপিএম কংগ্রেস নেতৃত্ব একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এজন্য দুই শিবিরের নেতাদের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে আসন সমঝোতা হয়েছিল। সে মোতাবেক সদর মহকুমার ৬ আগরতলা, ৮ টাউন বড়দোয়ালি, ৯ বনমালীপুর কংগ্রেস প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল বামেরা। গত ২৫ জানুয়ারি প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময়েও এই আসনগুলো কংগ্রেসের জন্য খালি রেখেছিল বামফ্রন্ট। এভাবে কংগ্রেসের জন্য মোট ১৩টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল বামফ্রন্ট। যদিও প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময়ে কংগ্রেস ১৩টি আসনের বদলে মোট ১৭ জনের নাম ঘোষণা করে। আর এতেই বামগ্রেসের অশুভ জোটের কফিনে প্রথম পেরেক পুঁতে দেয়। এনিয়ে দুই শিবিরের নেতাদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনাতেও কোন সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসে নি। যে কারণে অশুভ জোটের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে যায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে।
৩০ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা করার শেষ দিনে জোট ধর্মের বারোটা বাজিয়ে কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে একে একে নিজেদের বাছাই করা প্রার্থীদের হাজির করে লালবাড়ি। ৬ আগরতলা কেন্দ্রে সুদীপ রায় বর্মনকে ছেড়ে দেওয়া আসনে বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী শঙ্কর প্রসাদ দত্ত মনোনয়নপত্র জমা করেন। একইভাবে ৯ বনমালীপুর কেন্দ্রে গোপাল রায়কে দেওয়া আসনে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে অমল চক্রবর্তী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ঠিক একই কায়দায় কংগ্রেসের অন্যান্য আসনগুলিতেও বাগবাসায় বামফ্রন্ট। এভাবে জোট ধর্মের জলাঞ্জলি দিয়ে রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রেই শেষমুহূর্তে নিজেদের প্রার্থী দেয় বামফ্রন্ট। যদিও পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭টি আসনেই নিজেদের প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। এ থেকেই রাজ্যবাসীর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে নীতিগত বোঝাপড়া না থাকা, দুই পক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা ও অপরিণামদর্শী মানসিকতা থেকেই শেষপর্যন্ত ভেস্তে গেল অশুভ জোট। যার প্রভাব ভোট বাক্সে প্রচন্ড প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন।
অপরদিকে বাম কংগ্রেসের অশুভ জোটের মিতালি হাওড়া নদীর তলায় বিসর্জিত হতেই আখেরে শেষ হাসি ফুটলো শাসক ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বের। অবস্থা এখন এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে আসন্ন নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীদের জয়ের জন্য শুধু সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এদিকে কংগ্রেস সূত্রে খবর, ৬ আগরতলা কেন্দ্রে বাম শিবিরের প্রার্থী হিসেবে শঙ্কর প্রসাদ দত্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াতে বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন জুনিয়র বর্মন। জয়ের জন্য যাও কিছু আশা ছিল সেটাও হাতছাড়া হয়ে পড়ায় সুদীপ বর্মনের যাবতীয় ক্ষোভ এসে পড়েছে মেলারমাঠ লালবাড়ি নেতৃত্বের উপর। তবে জোট ধর্ম পালন নিয়ে এখনো আশার আলো জিইয়ে রেখেছেন দুই শিবিরের নেতৃত্ব। দুই পক্ষের মধ্যে এই জটিলতা নিয়ে খুব সহসাই আলোচনা হতে পারে। যদিও এই দুই শিবিরের কাছে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে রয়েছে প্রদ্যুৎ দেববর্মনের তিপ্রা মথা আঞ্চলিক দল। তিন পক্ষের মধ্যে আসন্ন নির্বাচনে ভোট কাটাকুটির জেরে হয়তো শেষ হাসি দিতে পারেন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরাই। সময়ই বলবে শেষ কথা।